অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আগ্রাবাদে পুলিশের হাতে নারী লাঞ্চিত, প্রতিবাদে যুবকের আত্মহত্যা

1
.

চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় এলাকায় ‘আসামী ধরার নামে বাড়ীর নারীদের ধরে নিয়ে লাঞ্চিত করার অপমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে সালমান ইসলাম মারুফ নামে (১৬) নামে এক কিশোর।

এঘটনার জের ধরে পুলিশের সাথে স্থায়ীদের হাতাহাতি মারামারি এবং সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। শত শত এলাকাবাসী শেখ মুজিব রোড অবরোধ করে অভিযুক্ত ডবলমুরিং থানার এসআই হেলালের বিচার দাবী করে। পরে সিএমপির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বিচারের আশ্বাস দিয়ে জনগণকে শান্ত করে অবরোধ তুলে দেন।

.

এদিকে তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশের এসআই হেলালকে প্রত্যাহার করেছে সিএমপি। ঘটনা তদন্ত করার জন্য সিএমপি’র পক্ষ থেকে দুই সদস্য করে বিশিষ্ট একটি কমিটিও করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনার সুত্রপাত হয় আগ্রাবাদ বাদামতলী মসজিদ গলিতে।

প্রতক্ষ্যদর্শী এলাকাবাসীরা জানান, রাতে সাদা পোশাকে ‘আসামী’ মারুফকে ধরতে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে যান ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেলালসহ ৪জন। সাদা পোষাকে থাকায় পুলিশদের চিনতে না পেরে তার সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ায় মারুফ। এসময় মারুফের মা ও বোন ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তারাও মারুফকে ছাড়াতে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।

.

এক ফাঁকে পুলিশের কাছ থেকে ছুটতে পেরে মারুফ পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে মারুফের বোন অজ্ঞান হয়ে গেলে পুলিশ তাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু পালিয়ে যাওয়া মারুফ তার মা ও বোনকে তার কারণে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এ ভেবে চাচার বাসায় গিয়ে সিলিং ফ্যানে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাত ১২টার দিকে ডবলমুরিং থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে লাশ উদ্ধার করতে গেলে এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে৷ তারা মারুফের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। এর জন্য এসআই হেলালের বিচার দাবী করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং বড় বড় পাথর ফেলে আগ্রাবাদ সড়ক অবরোধ করে। পুলিশের উপর হামলার চেষ্টা চালায়। এসময় র‌্যাবের দুই গাড়ী টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌছে। পুলিশের এসি ওসি এলাকাবাসীকে সুষ্ঠু বিচারে আশ্বাস দিয়ে শান্ত করে সড়ক অবরোধ তুলে দেয়।

নিহত মারুফের মা বলেন, তার ছেলে লাকি প্লাজার একটি দোকানে কাজ করে। সে কোন ধরণের অন্যায় কাজের সাথে জড়িত না। এসআই হেলালকে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে তার হাতে পায়ে ধরে বলেছি আমার ছেলে নিরাপরাধ তোকে ছেড়ে দেন। কিন্ত তিনি কোন কথা না শুনে আমাদের উপর হামলা চালায়, ঘরের মালামাল ভাঙচুর করে। আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে শাররীক ভাবে নির্যাতন করে এবং আমার কাপড়-ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলে। পরে মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে শিশু হাসপাতালে নিয়ে আটক করার ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা দাবী করে। না হয় পুলিশের উপ হামলার অভিযোগে মামলা করে চালান দেয়ার ভয় দেখায়। এখবর শুনে আমার ছেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

.

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এম হুমায়ুন কবির বলেন, পুলিশ মাদক মামলার আসামী ধরতে গেলে আসামী সালমান ইসলাম মারুফ এর মা-বোন পুলিশের উপর হামলা করে মারুফকে ছিনিয়ে নেয়। এসময় ভাইকে ছাড়িয়ে নিতে ঘটনাস্থলে এসে মারুফের’ বোন অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে স্থানীয় শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ তার মা ও বোনকে আটক করে নিয়ে গেছে ভেবে ওই ‘আসামি’ আত্মহত্যা করেছে।

ঘটনার পর পরই অভিযুক্ত ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল খানকে ক্লোজড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনা তদন্তের জন্য দুই সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপ কমিশনার ফারুক-উল হক।