অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ঘুষখোরদের বাহুবলে চট্টগ্রাম বিআরটিএ

0
.

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম। অবস্থিত জেলার হাটহাজারী থানাধীন নতুনপাড়া এলাকায়। এখানে বছরের বারোমাসই চলে ঘুষের কারবার। ঘুষ ছাড়া এখানে কোন কাজ হয়না। ঘুষে মিলে রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে রোড পারমিট, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ নানাবিধ কাজ।.আর এ ঘুষ লেনদেনের মূল হোতা দালাল। আর দালালদের নিয়ন্ত্রন করে নৈশ প্রহরী লিটন। আর লিটনকে পরিচালিত করেন চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বিআরটিএর উপ-পরিচালক শহীদুল্লাহ কায়সার গত মাসে সিলেটে বদলী হয়ে চলে গেছেন। তার আগের উপ-পরিচালক মো: শহীদুল্লাহ বিভিন্ন অনিয়ম আর দূর্নীতির অভিযোগে বদলী হয়ে রংপুরে চলে যান। কিন্তু মাত্র তিনমাসের মাথায় আবার পোষ্টিং নিয়ে চলে আসেন চট্টগ্রাম বিআরটিএতে। বর্তমানে তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। তার ফিরে আসার সুবাদে দালালরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ঘুষ ছাড়া সেবা গ্রহিতাদের মিলছে না কোন সেবা।

দালালদের সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি বাসের রুট পারমিট ও ফিটনেসের জন্য ১০ থেকে ৫০ হাজার, হিউম্যান হলার ৫ থেকে ৬ হাজার, ট্রাকের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ হাজার, ড্রাম ট্রাকের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ হাজার, মিনি ট্রাক ২ থেকে ৩ হাজার, ছোট ভ্যান এক থেকে দেড় হাজার টাকা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ৪০০ টাকা, টেম্পু থেকে -৫ হাজার টাকা বাড়তি ঘুষ হিসেবে দিতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্যও অতিরিক্ত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়।’

তবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ। তিনি জানান, ঘুষ নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। ‘ঘুষ’ অপ্রচারের কারন হিসেবে তিনি জানান, তার জনপ্রিয়তায় বিআরটিতে একটা সংঘবদ্ধ চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। কারো কোন অভিযোগ থাকলে সরাসরি তাকে জানানোর অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এএসআই সাদেক প্রতিদিন অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে কাজ নেন সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে। তিনি বিআরটিএ চত্বরের এ প্রান্ত ওই প্রান্তে দৌড়ঝাঁপ করেন গাড়ির কাগজপত্র নিয়েই।

চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উপপরিচালক মো: শহীদুল্লাহ বদলীর পর শহীদুল্লাহ কায়সার দায়িত্ব নিয়ে দালাল নির্মূলে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তখন তিনি জানান, পরিবহন নৈরাজ্য থামাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে বিআরটিএ। তখন তিনি জানান, নগরে বাস, মিনিবাস, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার, অটোটেম্পুসহ ৭৫ রকমের প্রায় ৮৫ হাজার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন আছে। ১৯৯০ সাল ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছিল।

তবে গাড়িগুলো নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষার জন্য বিআরটিএ কার্যালয়ে আনার নির্দেশনা থাকলেও অনেক মালিক তাদের গাড়ি ফিটনেস পরীক্ষার জন্য আনেন না। ফিটনেসবিহীন এসব গাড়িই বেশি নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে। নির্ধারিত রুট অনুসরণ করে না।

সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চললে যানজটের সৃষ্টি হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরে বাস-মিনিবাসের ১৪টি রুটে ১ হাজার ১২০টি চলাচল করে, কিন্তু এসব রুটে নির্ধারিত সিলিং ১ হাজার ৪৭৫টি।

অন্যদিকে হিউম্যান হলারের ১৭টি রুটে ১ হাজার ৩২৯টি গাড়ি চলাচল করে, কিন্তু এসব রুটে নির্ধারিত সিলিং ১ হাজার ৪০৬টির।একইভাবে নগরের ১৬টি রুটে ২ হাজার ২৪৭টি অটোটেম্পুর নির্ধারিত সিলিং থাকলেও সেখানে চলছে ৬৮২টি।

বিআরটিএ নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার আগে রুট পারমিট নিতে হবে জানিয়ে তিনি তখন জানিয়েছিলেন, আগে কেউ গাড়ি নিয়ে আসলেই আমরা রেজিস্ট্রেশন করে দিতাম। তবে এখন রেজিস্ট্রেশনের আগে তাকে রুট পারমিট নিতে হবে। অর্থাৎ যে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চাইছেন তা রুট ‘এবজর্বড’ করে কি না তা যাছাই করে রেজিস্ট্রেশন করার অনুমতি দেওয়া হবে।

নির্দিষ্ট রুট অনুসরণ না করলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গণপরিবহনের নির্দিষ্ট রুট অনুসরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো গাড়ি তা অমান্য করলে তার রুট পারমিট বাতিল করা হবে। কিন্তু তার বদলির পর এ উদ্যেগ আবার ভেস্তে যেতে শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন নিবন্ধনপ্রাপ্ত রুট পারমিট নেই এমন থ্রি-হুইলার ম্যাক্সিমা, এইচ পাওয়ার, মাহিন্দ্রা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরি ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। কিন্তু বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সহযোগীতায় তা নগরীতে হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে চলাচল করছে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত ২ বছর যাবৎ থ্রি-হুইলার অটোরিক্সার আদলে প্রায় ৩ হাজার অটোরিক্সা বিআরটিএ নিবন্ধন প্রদান করে। এসব আমদানি করা ম্যাক্সিমা, এইচ পাওয়ার, মাহিন্দ্রা, টমটমসহ ৪ আসনের অটোরিক্সা আমদানি করে ১০ আসনের অটো টেম্পুর আদলে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছিল। নিবন্ধনকৃত এসব রুট পারমিটবিহীন যান বিভিন্ন মালিক সমিতির চাঁদা দিয়ে অবৈধভাবে নগরীতে চলাচল করছিল।

বিষয়টি চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটো টেম্পো শ্রমিক লীগের (রেজি নং-চট্ট ১৪৬৯) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন আদালতের নজরে এনে রিট আবেদন দায়ের করলে রিটটির শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে অননুমোদিত এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন জব্দেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, অটোরিক্সা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ বাস্তবায়ন না করে উক্ত যানবাহন চলাচলের জন্য কেন রুট পারমিট দেওয়া হবে এই মর্মে রুল জারি করা হয়। রিটের শুনানী শেষে এমন আদেশ দেন হাইকোর্ট।

অভিযোগ আছে, আমদানি করা ম্যাক্সিমা, এইচ পাওয়ার, মাহিন্দ্রা, টমটমসহ ৪ আসনের অটোরিক্সা আমদানি করে ১০ আসনের অটো টেম্পুর আদলে নিবন্ধন দেওয়ার কাজটি করেছিলেন চট্টগ্রাম বিআরটিএর বর্তমান উপ-পরিচালক মো: শহীদুল্লাহ। প্রতিটি গাড়ি থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তিনি নিবন্ধন প্রদান করেন। তোর যাগসাজশেই ৪ হাজার যানবাহন রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়।

এর আগে বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর সংস্থার পক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনে জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। সেখানে বলা হয়, এই জালিয়াতির ফলে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

জালিয়াতির ঘটনায় বিআরটিএর চট্টগ্রাম অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। উপ-পরিচালক মো: শহীদুল্লাহ ছাড়াও সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম, অফিস সহকারী রবিউল হাসান, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদত হোসেন চৌধুরী, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল করিম ও মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ। এ ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে আরেক সহকারী পরিচালক শেখ রোকনউদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে তার সহযোগী ছিলেন মোটরযান পরিদর্শক মামুনুর রশিদ। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলী হলেও তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিআরটিএতে থেকে গেছেন বহাল তবিয়তে। বর্তমান উপ-পরিচালক মো: শহীদুল্লাহর ডান হাত বলে পরিচিত তিনি বিআরটিএতে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মেট্রো অফিস এবং জেলা অফিস মিলে মোট ৪১৫৩টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে দুর্নীতির প্রমাণ মিলে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রো-১ সার্কেল অফিসে অনিয়ম হয়েছে গাড়ির সিসি কম দেখানোসহ নানা কৌশলে। সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে অনিয়ম হয়। গাড়ি ও কাগজপত্র পরীক্ষা না করেই রেজিস্ট্রেশন অনুমোদনে তাকে সহায়তা করেছেন অফিস সহকারী রবিউল হাসান, মোটরযান পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন এবং মেকানিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদত হোসেন চৌধুরী। তারা যোগসাজশ করে ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪২ টাকা রাজস্ব ক্ষতি করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

এদিকে চট্টগ্রামে ৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেন তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩ হাজার অটোরিকশা নিবন্ধনে সরকার এবং চট্টগ্রাম রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি, চট্টগ্রাম) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে সহকারী পরিচালক শেখ রোকনউদ্দিন দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন। এ ছাড়া ১১৮৪টি অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে যা দুর্নীতির শামিল। এ ক্ষেত্রে জেলা সার্কেল অফিসের সহকারী পরিচালক শেখ রোকনউদ্দিন ও মোটরযান পরিদর্শক মামুনুর রশিদ উভয়ই দায়ী। এ ছাড়া ২৯৬৫টি গাড়ি পরীক্ষা না করেই মোটরযান পরিদর্শক মামুনুর রশিদ প্রত্যয়ন দিয়েছেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে ৩ হাজার নতুন সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। সহকারী পরিচালক শেখ রোকনউদ্দিন অটোরিকশা নিবন্ধনের আবেদন লিখতে দুটি রেজিস্টার খোলেন। এর ভুয়া। প্রথম রেজিস্টারে ১৮৯৬টি আবেদন লেখা হয়। এর মধ্যে ১৮১১টি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও ছয়টি আবেদন লেখা হয়। যার মধ্যে পাঁচটির নিবন্ধন দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১১৮৪টি অটোরিকশার নিবন্ধনের আবেদন লেখা হয় ভুয়া রেজিস্টারে। তদন্তে দেখা যায়, এসব আবেদনও ছিল ভুয়া। প্রথম রেজিস্টারে লেখা ১ ১১৮৪টি নম্বর হুবহু ভুয়া রেজিস্টারে তুলে দেওয়া হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশার এসব নিবন্ধন নিয়ে ঘুষের অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় চলাচল করা প্রায় এক লাখ গাড়ির ফিটনেস নেই। এর মধ্যে বেশিরভাগ গাড়ি চালাচ্ছেন অল্পবয়স্ক ও অদক্ষ চালক। আবার এদের মধ্যে অনেকের লাইসেন্স ভুয়া। এতে করে নিত্য দুর্ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে প্রাণহানি।

বিআরটিএর সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলাচল করে প্রায় এক লাখ নব্বই হাজার গাড়ি। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ গাড়ির ফিটনেস নেই। এদের কোনো ডকুমেন্টও নেই। বিআরটিএর কাছে না গিয়ে বছরের পর বছর রাস্তায় চলছে এসব গাড়ি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদান প্রকল্পে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় শুরুতে দুটি নম্বর প্লেটের জন্য পাঁচ হাজার টাকারও বেশি আদায় করা হয়। বর্তমানে নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় নম্বর প্লেটের জন্য আদায় করা হচ্ছে ৪,৬২৮ টাকা। আগে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে এমন গাড়ির নম্বর প্লেটের জন্য আদায় করা হচ্ছে ৩,৬৫২ টাকা। গাড়ির ফিটনেস না থাকলে ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদান না করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত যায়। বর্তমানে নম্বর প্লেটের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করলে যে কোনো গাড়ির মালিক ডিজিটাল নম্বর প্লেট পাচ্ছেন। অপরদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়ির পাশাপাশি আছেন ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক। এছাড়া কিশোরদের হাতেও গাড়ির স্টিয়ারিং।

লাইসেন্স ইস্যু করার একমাত্র ক্ষমতা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ)। সরকারি এই সংস্থা নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে। মূল লাইসেন্স পাওয়ার আগে একজন চালক শিক্ষানবিশ লাইসেন্স নেন। এই লাইসেন্স দিয়ে কিছু দিন গাড়ি চালানোর পর লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই কেবল লাইসেন্স পান একজন চালক। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনোভাবেই বৈধ লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বিআরটিএকে পাশ কাটিয়ে সংঘবদ্ধ দালালদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করতে কোনোরূপ হয়রানি হতে হয় না। আর এ দালাল চক্রের মূল হোতা. এইচএম আসিম (লিটন)। তিনি বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের একজন নৈশ প্রহরী।

জানা গেছে লিটন বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলে আসার আগে তিনি ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি বিভিন্ন সার্কেলে কাজ করার সময় জড়িয়ে পড়েন দালাল চক্রের সাথে। এই চক্রের নানা অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে তিনি এখন বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক।

অভিযোগ রয়েছে, নৈশ প্রহরী লিটন তার একজন ঘনিষ্ট বন্ধুর (সরকারি আমলা) প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম বদলী আসেন। আসার পর তিনি বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলে গড়ে তোলেন শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম সার্কেলের সকল অপকর্ম পরিচালিত হয় এই দালাল চক্রের মাধ্যমে।

অন্যদিকে বিআরটিএ’তে দেড়যুগের বেশি সময় ধরে বছর ধরে যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার জন্য ৩ কোটি টাকায় কেনা ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) মেশিন নষ্ট পড়ে আছে। তাই ভিআইসি মেশিনে ফিটনেস পরীক্ষা না করিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে বিআরটিএ দেয়া হচ্ছে ফিটনেস সার্টিফিকেট। ভিআইসিতে পরীক্ষা করলে যানবাহনের শতকরা ৬০ ৭০ শতাংশ ক্রুটি ধরা পড়তো বলে জানান বিআরটিএর’র কয়েকজন কর্মকর্তা। ভিজ্যুয়াল ইনস্পেকশনে যানবাহনের সিকিভাগ ত্রুটিও ধরা পড়েনা বলে তিনি জানান।

হাটহাজারীর নতুনপাড়া বাস ডিপোর পাশে বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে. বিশাল এলাকা জুড়ে বাউন্ডারীতে ঘেরা জায়গায় এডিবির অর্থায়নে ৩ কোটি টাকায় কেনা ভিআইসি মেশিনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে অন্য সেকশনের কর্মচারীরা বসে কাজ করেন।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে এটি বসানোর পর থেকেই সেটি পড়েছে অচল। কিন্ত মেশিনটি সচল থাকলে এ মেশিনটির উপরে কোন যানবাহন উঠালে তাতে কোন ত্রুটি থাকলে তা কম্পিউটারে সাথে সাথে ধরা পড়তো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।