অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সুচির ঘনিষ্ঠরাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর অবস্থানে অবাক

0
.

মিয়ানমারের পুনর্জাগরণের নেতা তিনি। সেনাবাহিনী যখন তাঁকে গৃহবন্দি করে, তাঁর মুক্তির দাবিতে জেল খাটেন অনেকে, করেন মৃত্যুবরণও৷ কিন্তু সেই সুচির ঘনিষ্ঠরাই এখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর অবস্থানে অবাক।

সুচির এই বিস্ময়কর পরিবর্তনের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে বার্মা থা দিন নেটওয়ার্ক নামে মিয়ানমারের একটি ফান ম্যাগাজিন। তারা বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ভাড়া করা রুশ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়াররা অং সান সুচির শরীর থেকে গণতন্ত্রের জিন সরিয়ে একটা ক্লোন তৈরি করেছে। সত্যিকারের সুচি এখনও সেনাবাহিনীর কারাগারে বন্দি।

স্পষ্টতই এটা ফান ম্যাগাজিনের একটা বানানো গল্প। কিন্তু এই ব্যাঙ্গ গল্পেই ফুটে উঠেছে সুচির বিস্ময়কর পরিবর্তনে মিয়ানমারের অসাম্প্রদায়িক মানুষ কতোখানি বিস্মিত। তারা ভাবতেও পারছে না, কয়েক বছর আগেও যে সুচি একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলতেন, সেই সুচি কীভাবে এতটা বদলে গেলেন?

.

সুচি যখন কয়েক দশকের সেনা শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন, এক মেডিকেল ছাত্রী সব বাধা উপেক্ষা করে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েছিল। সুচির প্রতি আনুগত্যের কারণে তাঁকে ছ’বছর কারাগারে কাটাতে হয়। অসুস্থ হয়ে একবার বন্দি অবস্থাতেই মরতে বসেছিলেন তিনি। সেই ছাত্রী মা থিডাও এখন সুচির কর্মকাণ্ডে অবাক। মা থিডার মতো যারা সুচির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, এখন তাঁদের অনেকেই নিন্দা জানানোর ভাষাও খুঁজে পান না।

সুচির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের কিছু হলো – নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং মুসলিমদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সহিংসতাকে দেখেও না-দেখা, সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্টদের কারাগারে পাঠানো, এখনও যথেষ্ট ক্ষমতাধর সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি নতজানু হয়ে থাকা এবং পরবর্তী নেতা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যর্থ হওয়া।

সুচির বয়স এখন ৭২। অনেকেই বলছেন, যখন তিনি থাকবেন না, তখন নেতৃত্বে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। আর সে শূন্যতার সুযোগে আবার সেনাবাহিনীর হাতেই ক্ষমতা যাবে বলেও তাদের আশংকা।

সুচি সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলে এলেও তার মধ্যে সবসময়ই স্বৈরাচারী মনোভাব ছিল বলেও মনে করছেন অনেকে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা শুধু সেই মনোভাবকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে মাত্র। সুচির এককালের ঘনিষ্ঠ সহচর মা থিডা বলেন, ”মাত্র দেড় বছরে পুরো দেশ পরিবর্তন করে ফেলবেন তিনি – তা আমরা আশাও করি না। কিন্তু মানবাধিকার রক্ষায় তার উদাসীনতা আমাদের হতাশ করেছে।”

শুধু তা-ই নয়, রাখাইনের অবস্থা পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন পাঠাতে চাইলে তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয় সুচি’র সরকার৷ ‘’মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং জাতিগত নির্মূল অভিযান চলছে” – জাতিসংঘের এমন বক্তব্যও বেমালুম অস্বীকার করে সুচি’র সরকার। গণধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে সুচির অফিশিয়াল ফেসবুক থেকে দেয়া হয় একটি ম্যাসেজ – ‘ফেক রেপ’ বা ‘ভুয়া ধর্ষণ’৷

অথচ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! এইকি সেই সুচি, যিনি বছরের পর বছর ধরে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে গেছেন, ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি ছিলেন, দেখা করতে পারেননি তাঁর স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গেও।

এই অনমনীয় মনোভাব তাঁকে এনে দেয় বিশ্বজুড়ে খ্যাতি। কিন্তু ২০১৬ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে সেনাবাহিনীর সাথেই সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন সুচি। আবার কেউ ধারণা করছেন, কষ্টে পাওয়া ক্ষমতা হারানোর ভয়ই তাঁকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধা দিচ্ছে।

তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ তাম্পাডিপা ইনস্টিটিউটের প্রধান খিন সাও উইন। সেনাশাসনের বিরোধিতা করে ১১ বছর জেল খেটেছেন খিন সাও। তিনি মনে করেন, ‘‘সুচি এখন আর সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি না। মূল কারণ হলো সুচি’র নৈতিক সাহসের অভাব৷” সূত্র : ডয়চে ভেলে